Thursday, August 22, 2019

কবিতা :: বাদাবন ------- -শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন

বাদাবন
-------
-শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন
(আমার জন্মদাতা এম এ আজিজ তোমাকে দেখা হয়নি তাই আমার অনেক কিছুই শেখা হয়নি)

আইল পথটা ধরে যতদুর গিয়েছি
পিতামহের বিশালতা আমি দেখেছি
আদিগন্ত ধানের ক্ষেতে দোল খায় ধানের শীষ
যেখানে আমারই প্রিয়তম পিতার শুভাশীষ
লন্ডন প্যারিস যাইনে আমি
তোমার কাছে যাই
তোমার সবুজ ঘেরা সুন্দরী বন
কেবল টানে আমার মন।
বনের বাঘ কিংবা হরিণ
সাপ অথবা জলের কুমির
সবই আমার সঙ্গী সাথী।
সুখ বলো আর দুঃখ বলো
সাদা কিংবা কালো
যেই থাকুক
বন্ধু অটুট।
বনের বানে নৌকা বাইচ কিংবা রাসের মেলা
ভাসায় প্রাণের ভেলা এবং আনে সুখের দোলা।
মৌয়াল বাওয়ালীর বাঁশির সুরে
ভালবাসার মেল বন্ধন আনুক অন্তরে
সুন্দরবনের গেওয়া গরান
জুড়াক সবার পরান।
------------------
২৩ অগাস্ট’১৩
পলাশপোল, সাতক্ষীরা।

কবিতা:: থেমে গেলো তুলি

থেমে গেলো তুলি

শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন


আমার শৈশব, আমার কৈশোর, আমার তারুণ্য, 
আমার ছাত্রমৈত্রী, আমার যুবমৈত্রী 
সব যেখানে মিলিয়ে যেত সে আমাদের ঈষিকা আর্ট। 
সেই ঈষিকা'র প্রাণভোমরা আমাদের প্রিয় জলিল ভাই। 
প্রিয় জলিল ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।
আমরা শোকাহত।
লতা ভাবী, পাভেল
কাউকে সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
শুধু বলবো
আমাদের জলিল ভাই মানে
জনগণের শিল্পী জলিল ভাই
আমাদের জলিল ভাই মানে
বাকশাল ছাত্রলীগের জলিল ভাই
আমাদের জলিল ভাই মানে
সবার সমান চেয়ার
আমাদের জলিল ভাই মানে
সবাইকে এক কাপ করে চা
আমাদের জলিল ভাই মানে
সকল দুঃখেও হাসিমাখা মুখ
আমাদের জলিল ভাই মানে
দুঃখের মাঝেও সুখ
আমাদের জলিল ভাই মানে
সব মানুষের জলিল ভাই।

কবিতা:: দেবে ? এখনই দাও

দেবে ? এখনই দাও
-------------
-শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন
(মাম রাজা জীবনে তো বস্তুগত কিছু দিতে পারলাম না 
যেভাবে অসংখ্য ঈদ উৎসব দিয়েছি তোকে সেভাবেই এই ভার্চুয়াল কবিতা
বলতে পারিস যত্তোসব ফালতু, যেভাবে বলে দুঃসময়)
পায়ে পায়ে হাটতে হাটতে নাকাল আমি
দিগন্ত ছুঁয়ে দেখিনি
সব ভ্রষ্টদের কাছে
জীবনের সব অসহায়ত্ব
তবু ঘুরে যাব মনে হয়।
ব্যাস ওই পর্যন্ত
কাট
আবার যখন শুরু অ্যাকশন
তখন জীবন্ত মমি।
কেউ দেখবে না
নিজেও দেখব না নিজেকে
তাহলে সেই তৃপ্তির ঢেকুর আমি তুলব না।
সব নষ্টদের কিলিবিলিতে কি সমাজ ভেঙেছে ?
ভাঙলেও তার বদল হয়
ইতিহাসে
জীবনের ইতিহাসে তবে সব পরাজয়
হায় সব পরাজয়।
ইতিহাসে যে বদল পাঠসূচিতে চক্ষু বোলাবে
আমারই প্রজন্ম
সেই বদলের মুখে ঘৃণা দিলাম ছুঁড়ে
মরণ করব বরণ তোরে
তবু আমার না দেখা বদল
নেব না
অতটা করুণা চাইনি
অতটা নেব না
জীবনের যা কিছু ক্ষত
তার হিসেব হবে, নয় গত
হবে দিতে এখনই নগদ।
আসবে পরিবর্তন
পাবো না ছোয়া
অতটা বেকুব হয়নি আবেগ।
সব লেনদেনে আর দেনা পাওনার হালখাতা
মিলিয়ে দিলাম
যদি পার দিও তার পুরস্কার
নইলে তিরস্কার
রব না প্রতিক্ষায়
জীবনের এককথা জয় নয় পরাজয়
এর মাঝে
নাই
কিছু নাই।
হতে হবে এভাবেই হয়।
----------
২২অগাস্ট’১৩
পলাশপোল, সাতক্ষীরা।

Tuesday, May 17, 2016

নিজেই নিজের মুখে চুনকালি দিয়েছো



মৌলবাদী দক্ষিণপন্থীদের শাসনামল হলে হয়তো এতো ভারাক্রান্ত হতাম না। কেন এতো দুঃসময় পার করবে প্রিয় বাংলাদেশ। এ প্রশ্ন আজ অনেকের মনে বারবার বারবার ঘুরপাক খেলেও আমার মনে ঘুরপাক খায় না। কারণ নিজের অজান্তেই শাসক তুমি তোমার চরিত্র প্রকাশ করে দিয়েছো। এখন প্রকাশিত চরিত্রের যে মুখ তুমি নিজেই খুলে দিয়েছো। তা তুমি চাইলেও ঢাকতে পারবে না। কারণ তুমি নিজে নিজেই নিজের মুখে চুনকালি দিয়েছো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারোনি। তুমি তনু’র ধর্ষক ও খুনীর বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নিতে পারো না। তোমার রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেবল ধুর্তামি। কী করে ঢাকবে ওই মুখ। তুমি জয়নাল হাজারির পক্ষে যাও তুমি তাহেরের পক্ষে যাও শামীম ওসমানের পক্ষে যাও। তার মানে তুমি খুন গুম হত্যারই পক্ষে। তুমি একাত্তরের গণহত্যার যদি বিপক্ষেরই হও তবে কেন এই খুনীদের প্রশ্রয় দাও? কেন আজ রাজধানী থেকে গ্রাম সর্বত্র খুনী গডফাদারদের করালে দিয়ে দিচ্ছো বাংলাদেশকে? তুমি কি খুনের রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করতে চাও সর্বত্র ? আগেও বলেছি এখনও বলছি জেনে রেখো ইতিহাস তোমার প্রতিটি কাজের মুল্যায়ন করবে। তোমার ভন্ড বিরোধী দল যাদের হাতে নুর হোসেন, নাসিম, ডা: মিলনদের রক্ত সেই বিরোধী দলের (জাপা) সাংসদ শিক্ষকের গায়ে হাত তোলে। ধর্ম রক্ষার নাম করে শিক্ষককে কান ধরে উঠবস করায়। তোমার ইন্ধন না থাকলে এরা এতো খুন, নষ্টামি গুন্ডামি করতে পারে না। তুমি এদের যে প্রশ্রয় দিচ্ছো তার খেসারত তোমাকে দিতেই হবে। যতই ভাবো সময় তোমার নো নেভার সময়টা তুমি তুলে দিচ্ছো দুঃসময়ের কাছেই। অপেক্ষা করো বুঝবে মানুষের ঘৃণার আগুনের ফুল্কি কতো। তোমার যত অর্জন  ততটা ধ্বংস করছে তোমারই দানব শাসন যন্ত্রের শাসকেরা। তোমার পার্টি পুর্টির ফুর্তিবাজ ধান্দাবাজরা।
তুমি চাও না জঙ্গিরাও চায় না আমরা লিখি। রবীন্দ্রনাথ-আইনস্টাইন পড়ি। তোমাদের ঐতিহাসিক মিলনে নিয়তই খুন হচ্ছে দেশের সূর্য্যসন্তানরা। রক্তে রক্তে লাল করে ফেলেছো পুরো দেশটা। তাতে তোমাদের কোন যায়ও না আসেও না । তোমরা চোখে দিয়েছো ঠুলো আর কানে দিয়েছো তুলো। মনে রেখো এগুলো অন্ধকার সময়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটিই করে যাচ্ছো। এ ফাঁদে তুমি ফেলো না বাংলাদেশকে। এফাঁদ নির্মাণ করলে এ ফাঁদে তুমিই পড়বে। 
সময়কে যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাও উপায় একটাই ঘুরে দাঁড়াও সময়টাকে মানুষের করে তোলো। না হলে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবেই। সময়টা তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেবেই। তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। কারণ ভাল মানুষের কাছে প্রিয় বাংলাদেশের সময়টা যাবে না। ভাল মানুষগুলো বড় নিরীহ তারা সহসা এক হতে পারবে না। এই দুঃসময়টা চাইলেই সহসা সুসময় করতে পারবে না। তুমি ঘুরে দাঁড়াও নইলে মানুষ ঘুরে দাঁড়াবেই তাতে তুমি থাকো আর নাই থাকো।

Monday, May 16, 2016

৫৭ ধারা আর চাপাতি’র হুমকির মুখে বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যম ও মুক্তচিন্তা




গণতন্ত্র অবরুদ্ধ হলে গণমাধ্যম তার স্বাধীনতা হারাবে এটি নতুন কিছু না। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ কি না তা বলতে না পারলেও গণমাধ্যম যে অনেকাংশে স্বাধীনতা হারিয়েছে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সংবাদ মাধ্যম ও সাংবাদিকতাকে আজ যে অন্ধ শেকলে আটকে ফেলা হয়েছে তা কঠিন লোহার শেকলের চেয়েও শক্তিশালী। গণমাধ্যমের সকল বিভাগকে সেই কঠিন শেকলে আটকে ফেলা হয়েছে। এমন কী ফেসবুক টুইটারের মতো সামাজিক গণমাধ্যমগুলোও আছে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে। ৫৭ ধারা দিয়ে রীতিমতো ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশের গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে বার্তা প্রবাহ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল তা আজ আইনী শেকলে আটকা পড়ে এক ধরনের গলার ফাঁস হিসেবে প্রতিয়মান হয়েছে। গাছেরটা খাবো আর তলারটা কুড়ানোর নীতিতে চলার কারণে কথিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এ নিয়ে কোন কথা বলেনি। বিএনপিও প্রয়োজনীয় বিরোধীতার প্রকাশ ঘটাতে পারেনি তাদের আমলেই এ আইনের বীজ বোপিত হয়েছিল বলে। ইতিহাসের নিকটবর্তি শেকড়ে প্রবেশ করলে দেখা যায় বাংলাদেশে মূলত তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ২০০৬ সালে প্রথম তথ্যপ্রযুক্তি আইন তৈরি করা হয়। ওই আইনে নয়টি অধ্যায়ে মোট ৯০টি ধারা যুক্ত করা হয়। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে, তার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যায়। এ আইনের অপব্যবহার ও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিষয়টি অনুধাবণ করে সরকার ২০১১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে সংশোধন আনার চিন্তা শুরু করে। এবং এ আইনের শাস্তি ও আইন প্রয়োগে পরিবর্তন আনার চিন্তা করে। অবশেষে ২০১৩ সালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন সংশোধন করে এ আইন প্রণয়ন করা হয়। একই বছরের ৮ অক্টোবর সংসদে আইনটি সংশোধিত আকারে পাস করা হয়। আর এই পাসকৃত আইন দিয়ে ডান্ডা মারা হচ্ছে যাকে তাকে। আজ নিয়তই ব্লগার থেকে শুরু করে শিক্ষকসহ মুক্ত চিন্তার মানুষদের মুক্ত চিন্তা প্রকাশের সাথে সাথেই রাষ্ট্রের চাইতে মুর্তিমান আতংক দানবরা সেসব মানুষদের হত্যা করছে। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট সিপিজে ব্লগারসহ মুক্ত চিন্তার মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বললেও তা নিশ্চিত করেনি বাংলাদেশ। প্রতিনিয়তই ঘটছে বর্বোরচিত হত্যাকান্ড। আর রাষ্ট্র বলছে বেড টু বেড নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এটি আসলে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার লজ্জাজনক প্রকাশ। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বিশ্বে আবর্তিত হয়েছিল বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস।


প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ইউনেস্কোর মূল দর্শনের প্রধান কেন্দ্র ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মুক্ত গণমাধ্যম- এ বিষয় দু’টি। ১৯৪৫ সালের নভেম্বরে গৃহীত ইউনেস্কোর গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে যে, ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত দেশসমূহ গণযোগাযোগের সুবিধাসমূহ কাজে লাগিয়ে নিজেদের পারস্পরিক জ্ঞান ও সকল জনগণের ধারণা বিনিময়ের কাজ এগিয়ে নেবে এবং কথা ও ছবির মাধ্যমে ধ্যান ধারণার মুক্ত প্রবাহ ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া ইউনেস্কো মানবাধিকারের বিশ্ব ঘোষণার প্রতিও অঙ্গীকারাবদ্ধ যার ১৯ নং পরিচ্ছেদে ব্যক্ত হয়েছে: “প্রতিটি মানুষের নিজস্ব মত পোষণ ও প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে; যেখানে মতে পোষণে কারো উপযাজকতা থাকবে না, যেখানে থাকবে যে কোন গণমাধ্যম ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্য ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা গ্রহণ ও বিনিময়ের অবাধ সুযোগ।”

ইউনেস্কোর ১৯৯১ সালের উইন্ডহোয়েক ঘোষণায় সংবাদ স্বাধীনতা বলতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বহুমুখীনতা ও বাধাহীনতাকে বোঝানো হয়েছে। নামিবিয়ার উইন্ডহোয়েক এ অনুষ্ঠিত সম্মেলনের ধারাবাহিকতায় ইউনেস্কো ও জাতিসংঘের জনসংযোগ বিভাগের যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় “বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস”। সম্মেলনের ঘোষণাটি উইন্ডহোয়েক ঘোষণা নামেই পরিচিত, যেখানে নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা বলতে মুক্ত স্বাধীন সংবাদকে বৃহত্তম আঙ্গিকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালের জাতিসংঘের সাধরণ পরিষদের প্রস্তাব অনুসারে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের ২৬ তম সুপারিশের আলোকে দিবসটি পালিত হচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর ৩ মে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন করা হয়।

আজ বাংলাদেশে যে প্রেক্ষাপটে মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন করা হচ্ছে তখন দেশের সবচাইতে শক্তিশালী গণমাধ্যম ডেইলি স্টার থেকে শুরু করে সাধারণ ফেসবুকার সবাই আজ নিপীড়নের শিকার। রাষ্ট্র থেকে চাপাতি সবাই তাক করে বসে আছে। কেউই স্বাধীনভাবে আজ মতপ্রকাশ করতে পারছে না। সাথে আছে সাতান্ন ধারার খড়গ। ৫৭-এর ১ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।’

৫৭ ধারার ২ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১)-এর অধীন অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যূনতম সাত বৎসর কারাদন্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হইবেন।’

তথ্যপ্রযুক্তি আইনটি সংশোধন করে ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে সমোলাচনা শুরু হয়। কেননা, এ আইনে পুলিশকে সরাসরি মামলা করার ও পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মানবাধিকারকর্মী ও সংবাদকর্মী ছাড়াও অনলাইন ব্যবহারকারীদের অনেকেই মনে করছেন, এ আইনের অপব্যবহার হতে পারে। তাদের শঙ্কার কথা অবশ্য এরই মধ্যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। সমস্বরে সকলেই বলছে ৫৭ ধারা আর মুক্ত গণমাধ্যমের চিন্তা দুটি আসলে যোজন যোজন দুরত্ববহ চিন্তা ভাবনা। এই ৫৭ ধারায় বারবার আটকানো হয়েছে বিরোধী মতকে। বিরোধী মত চিন্তা যারা আটকায় নিঃসন্দেহে তারা গণতন্ত্রের বৈপিরত্বে স্বৈরতন্ত্র চালিয়ে যাবারই নামান্তর কাজ করে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে গণমাধ্যম সরকারকে পরাজিত করতে চায় না। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষতিকর ত্রুটি খুঁজতে সাহায্য করে। তাতে সুবিধাবাদি শ্রেণি পরিবেষ্টিত সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করে থাকে। যা বুঝতে অনেকেরই দেরি হয় বিধায় আজ আমাদের অনেক কিছু থেকেও চারিদিকে নেই নেই একটা আবহাওয়া তৈরি হচ্ছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্বাধীন গণমাধ্যম উন্নয়নে যে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে, বিশেষ করে আমাদের জাতীয় অর্জনের দিকে তাকালে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন। মুক্ত সাংবাদিকতার উৎকর্ষ সাধন করতে এমন পরিবেশ প্রয়োজন যেখানে সকল প্রতিবন্ধকতা দূরে ফেলে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে নিরাপদে নিয়ে কাজ করবে। এমন পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হোক সকল দেশে ও সমাজে। নিশ্চিত হোক গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সুন্দর আগামী। আজকের চলমান ভীতিকর অবস্থায় মুক্ত মতপ্রকাশে ৫৭ ধারা ও চাপাতি যেভাবে তাক করে আছে তা দুর করতে হবেই। রাষ্ট্রকে নাগরিকের চিন্তার মতো করে না হয়ে যদি শুধুমাত্র সরকারের চিন্তায় বিকশিত হতে থাকে তাতে নাগরিকের কাছে আস্তে আস্তে অগ্রহণযোগ্যই শুধু না ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। 

Sunday, May 15, 2016

প্রিয় মা-আব্বা



প্রিয় মা-আব্বা, 
সবাই যখন বিশেষ বিশেষ দিনে যার যার বাবা মা’কে স্মরণ করে তখন আমি তোমাদের অস্তিত্বের সন্ধানে স্মৃতি হাতড়াই। 
কোন কিছুই যখন নিজের জন্য মেলে না। তখন এ ছবিটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকি। আর বারবার দেখি। সেই সাথে সাথে সবকিছু খুঁজে পাবার আনন্দে ভাসি।
তোমরাই আমার সব না থাকার জীবনে সব খুঁজে পাওয়া। না পাওয়ার সব বেদনার মাঝে সব পেয়ে যাওয়া মহাআনন্দের মতো। জীবনে এর থেকে বড় সম্পদশালী আমি কোনদিন হতে চাই না। যখন অসুস্থ হই তখন এছবি মহা ঔষধ। 
যখন ভয় আটকে ধরে তখন তো শুধু তোমরা। 
যখন মৃত্যু ভয় তখন তোমাদের এছবি’র পাশে নিজেকে সপে দেই নির্ভাবনায়। 
যখন অনিয়ম আর শ্রেণী শোষণ দেখি তখন তোমরাই সংগ্রামের মহা অনুপ্রেরণা।
যখন বিপদ এসে সামনে দাঁড়ায় তখন তোমরাই শেষ আশা ভরসার কেন্দ্রস্থল।
তোমরা ভরসা দিও আমার মতোই যেন আমার অবুঝ সন্তান আমার অবর্তমানে পিতৃহীনতার শোক সইতে পারে। একাকী জীবনের কঠিন ওই পথটা বইতে পারে। 
প্লিজ তোমরা ওকে সোনাদাদু বলে আদর দিও ভরসা দিও আর সাহস দিও।

Tuesday, February 26, 2013

মৌ চাষে স্বাবলম্বী দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র নারী মৌ চাষী করুনা রানী সরদার


পরিশ্রম ও আগ্রহকে পুঁজি করে দিনের পর দিন এগিয়ে চলেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার একমাত্র নারী মৌ চাষী করুণা রানী সরদার (৪৬)।
ছয় বছর ধরে সে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য মৌ বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করে চলেছে। করুণার বাড়ি সুন্দরবন সংলগ্ন ইউনিয়ন মুন্সীগঞ্জের চুনকুড়ি গ্রামে। সে ভূপেন্দ্র নাথ সরদারের স্ত্রী।
এলাকায় জনপ্রিয়তার কারণে বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি মহিলা ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। মৌ বাক্সের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালন-পালন করে মৌমাছির স্বাভাবিক জীবনযাপনের সঙ্গে মিল রেখে মৌ চাষ করে করুণা রানী স্বাবলম্বী। মৌ চাষের আয়ের মাধ্যমে করুণা রানী এখন একটি স্বল্প আয়তনের চিংড়ি ঘের মালিক। দুটি কন্যা সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার জন্য খুলনা বয়রা সরকারী মহিলা কলেজে ভর্তি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ ছাড়া দৈনন্দিন পরিবারের ব্যয় নির্বাহ চালিয়ে যাচ্ছেন।
একদিকে অধিক মুনাফা অর্জন অন্যদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের স্বাদ গ্রহণে করুণা রানী মৌ চাষে এগিয়ে আসেন বলে জানান। ২০০৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এ পেশার প্রতি অতি যত্নবান হয়ে চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। স্বামী ভূপেন্দ্র নাথ সব সময় তার পাশাপাশি থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যাচ্ছেন। তার মৌ চাষের খামারের নাম 'দাদু ভাই' মৌমাছি খামার। করুণা জানান বিসিক ও প্রশিকার সহযোগিতায় চার প্রকারের মৌমাছি ডরসেটা, সেরেনা, ফোরিয়া ও মেলিফোরা জাত নিয়ে মৌ চাষ চালিয়ে আসছেন। বর্তমানে তার ৫৮ টি মৌ কলোনি বা মৌ বাক্স আছে।
মধু উৎপাদনের সময় ও ফুল সম্পর্কে বলেন মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে সে কারণে বিভিন্ন ফুলের সময় বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ হয় এ সময় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, মানিকগঞ্জ যেতে হয়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে রাইসরিষা, ধনিয়া, কালজিরা, তিল, ফুলের মধু সংগ্রহে শরিয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, পাবনা, নড়াইল; মার্চ মাসে লিচু ফুলের মধু সংগ্রহে ঢাকা গাজীপুর, কাপাসিয়া, নাটোর, ঈশ্বরদী, পাবনাসহ অন্য স্থানে যেতে হয়। এবং এপ্রিল ও মে মাসে সুন্দরবনের খলিসা, গরান, কেওড়া, বাইনসহ অন্যান্য ফুলের মধু সংগ্রহ হয়।
জুন মাসে কালোতিল ফুলের মধু সংগ্রহে ডুমুরিয়া ও অন্যান্য স্থানে যেতে হয়। তিনি বলেন, এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একজন কর্মচারী রেখেছেন যার মাসিক বেতন সাড়ে ৩ হাজার টাকা। মৌ চাষের আয় ও ব্যয় সম্পর্কে আরো বলেন, যত বেশি মৌ বাক্স বা মৌ কলোনি হবে আয়ের পরিমাণ তত বেশি হবে। নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত মৌ বাক্স থেকে আয় করা সম্ভব হয়। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত তেমন কোনো ফুলের সমারোহ না থাকায় মৌমাছি খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। এ সময় তাদের কৃত্রিম খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। তিনি বলেন, দশটি মৌ বাক্সের জন্য সপ্তাহে ৫ কেজি করে খাদ্য দিতে হয় যার মূল্য আসে তিনশত টাকা। এ ভাবে ৫ মাস খাদ্য দিতে হয়।
করুণা রানী বেসরকারি সংগঠন প্রশিকা, বারসিক ও সুশিলন থেকে এ কাজের জন্য কিছুটা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। ইতোমধ্যে বারসিকের সহযোগিতায় ভারতের তামিলনাড়ু গিয়ে মোম ও মধু দিয়ে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। যেমন মোম দিয়ে লিপজেল, সাবান ও বাম। বিভিন্ন আচার তৈরির প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেছেন।
বর্তমানে তৈরি মালামাল বাজারজাতকরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজে ও বারসিকের মাধ্যমে। এ ক্ষেত্রে করুণা রানী তার মৌ চাষ প্রকল্পের কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন। উৎপাদিত মধুর বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা না থাকায় ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। বিভিন্ন এলাকায় মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে সরকারি সহযোগিতা না থাকায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পুঁজির সঙ্কট থাকায় বেশি বেশি বাক্স স্থাপন করতে পারেন না।
বর্তমানে এলাকায় মধুর প্রতি কেজি দাম সাড়ে তিনশ' থেকে চারশ' টাকা। ফলে মধুর দাম বেশি না থাকায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানান। মধুর কথা শুনলেই কার না জিহ্বায় জল আসে। মধুর উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যায় না। রূপচর্চা থেকে শুরু করে শরীরে শক্তি জোগাতে বিভিন্ন রোগ নিরাময়সহ অন্যান্য কাজে মধু ব্যবহার করা হয়। এলাকার অভিজ্ঞমহলসহ করুণা রানীর মতে মৌ চাষের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শন, গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য মৌ চাষের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। মৌ চাষ সমপ্রসারণের জন্য সহজে ঋণ প্রাপ্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার। এলাকায় মৌ চাষের সমপ্রসারণ করা হলে সুন্দরবনের ওপর বহুলাংশে চাপ কমে যাবে। ফলে একদিকে রক্ষা পাবে সুন্দরবন অপরদিকে রক্ষা পাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হাত থেকে মৌয়ালরা।
তাকে দেখে এলাকার অনেকেই মৌ চাষে আগ্রহী হয়েছে কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও পুঁজির অভাবে অনেকেই শুরু করতে পারছে না আবার অনেকেই ঝরে পড়ছে শুরু থেকেই।তাদের দাবি সরকার বা কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে দেশে মধুর চাহিদা পূরণ হবে সাথে সাথে কর্মসংস্থান ও পাবেন তারা।